“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষের নিকট আসে তার চল্লিশ দিনের নামায গৃহীত হয় না । আর যে তাদের কথাকে বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যা নাযিল হয়েছে তার সাথে কুফরি করল। আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এসব বিষয় থেকে।”
কোথায় তোমার সকাল সন্ধার যিকির বা দুআগুলো? সেগুলোই তো আল্লাহর ইচ্ছায় আসল রক্ষা কবচ এবং হেফাজতের দূর্গ। তোমার হেফাজতের জন্য আল্লাহ ফেরেশতাদের মত যে সমস্ত সৈনিক তৈরী করে রেখেছেন তাদের থেকে তোমার অবস্থান কোথায় ?
لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللّهِ
“তার পক্ষ থেকে প্রহরী রয়েছে তার অগ্রে এবং পশ্চাতে আল্লাহর নির্দেশে তারা তাকে হেফাজত করে ”। (সূরা র্আ রাদ ১১)
তুমি যত বেশী ইসলামের নিদর্শনসমূহের সংরক্ষণ করবে, তত বেশী তুমি নিরাপদ থাকবে। তুমি যখন ফজরের নামায জামাত সহকারে আদায় কর, তখন থেকে তুমি সন্ধা পর্যন্ত আল্লাহর দায়িত্বে ও তাঁর হেফাজতে থাকবে। এরপরও কি তুমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো মুখাপেক্ষী? তুমি যখন তোমার ঘর থেকে বের হও
তখন তুমি বলবে:
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، وَ لاَ حَوْلَ وَ لاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، اللهُمَّ إِنِّـيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظُلَمَ، أَوْ أَجْهل أَوْ يُـجَـهَلَ عَلَيَّ
অর্থাৎ“আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁরই উপর ভরসা করে বের হলাম। আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত প্রকৃত পক্ষে কোন শক্তি সামর্থ নেই। হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অন্যকে পথভ্রষ্ট করতে অথবা কারো দ্বারা আমি পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে, আমি অন্যকে পদস্খলন করা অথবা অন্যের দ্বারা পদস্খলিত হওয়া থেকে, আমি অন্যকে নির্যাতন করা অথবা অন্যের দ্বারা নির্যাতিত হওয়া থেকে এবং আমি অন্যকে মূর্খ অজ্ঞতায় ফেলা অথবা অন্যের দ্বারা অজ্ঞতায় পতিত হওয়া থেকে।”
এই দুআ পড়ার পর তোমাকে বলা হবে: ‘তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে, তুমি সঠিক পথে প্রদর্শিত হয়েছ এবং তুমি বেঁচে গেলে।’ শয়তান তোমার থেকে কেটে পড়বে এবং দূর হয়ে যাবে তার সঙ্গীদেরকে এ কথা বলতে বলতে, ‘তোমাদের আর কি করার আছে একজন ব্যক্তির ব্যাপারে যার জন্য যথেষ্ট হয়েছে, যে সঠিক পথে প্রদর্শিত হয়েছে, যে বেঁচে গেছে।’
একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক ব্যক্তির হাতে পিতলের একখানা বালা দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার হাতে এটাকি? উত্তরে লোকটি বলল, ‘এটা রোগের জন্য।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “দ্রুত ইহা খুলে ফেল, কেননা ইহা তোমার দুর্বল করা ছাড়া আর কিছুই বাড়ায় না। আর তুমি যদি এর উপরই মৃত্যু বরণ কর তাহলে কখনই সফলতা লাভ করবে না।’ ইমাম আহমদ ইমরান বিন হুসাইন থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন।
মূলতঃ লোকটি রোগের কারণে মৃত্যুর ভয়ে কল্পনা প্রসূত এই কবচ হাতে ধারণ করেছিল। তুমি কি জান না যে এই কল্পনা প্রসূত তাবিজ কবচ যে পর্যস্ত তুমি পরিহার না করবে সে পর্যন্ত তুমি গাণিতিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদ-দুআর মধ্যে পতিত হওয়াই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে ।
তিনি বলেন:
من تعلق تميمة فلا أ تم الله له ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له
“যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলাবে, আল্লাহ তার কাজের পূর্ণতা দান না করুন, আর যে ব্যক্তি কড়ি ঝুলাবে আল্লাহ তাকে স্বস্তি বা শান্তি দান না করুন।” ইমাম আহমাদ
উকবাহ বিন আমের থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন।
এখানে বুঝা গেল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বদ-দুআ সব সময় তাদের উপর পতিত হতেই থাকবে। অতএব যে ব্যক্তি তাবিজ গ্রহণ করবে আল্লাহ তার কাজের পূর্ণতা দান করবেন না। তা হলে কি লাভ এ সমস্ত অহেতুক তাবিজ কবচ ব্যবহার করে? আর যে ব্যক্তি কড়ি ঝুলাবে আল্লাহ তাকে স্বস্তি বা শান্তি দান করবেন না। এ কথার মধ্যে ঐ ব্যক্তির জন্য বদ-দুআ রয়েছে।
সার্বক্ষণিক সে চিন্তা ভাবনা, ভীতি ও অশান্তির মধ্যে থাকবে। স্বস্তি ও শান্তি তার থেকে হারিয়ে যাবে। যেখানে সে নিরাপত্তা চেয়েছে সেখানে ভয় ভীতিই চলতে থাকবে, যে পর্যন্ত এই অশুভ তাবীজ কবচের সাথে সম্পর্ক থাকবে ।
যে ব্যক্তি এ সকল তাবিজ-কবচের সাথে স¤পর্ক রাখে সে নিজের উপর আল্লাহর হেফাজত ও সংরক্ষণের দ্বার বন্ধ করে দেয়। হায় আফসোস! এটা তার জন্য কতবড় ধ্বংস যে আল্লাহর হেফাজত ও নিরাপত্তাকে বাদ দিয়ে পট্রি, সূতা, জুতা ইত্যাদির দিকে ফিরে যায় এবং সে উত্তমকে অধম দ্বারা পরিবর্তন করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من علق شيئاً فقد وكل إليه
“যে ব্যক্তি তাবিজ কবচ জাতীয় কিছু পরল তাকে এর দায়িত্বেই ছেড়ে দেয়া হবে।” (আহমদ ও তীরমিযি থেকে বর্ণিত হাদীস) এ ছাড়াও শিরকের মধ্যে সে পতিত হবে। আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে :
( من تعلق تميمة فقد أشرك )
“যে ব্যক্তি তাবিজ বাঁধল সে শিরক করল।”
হুযাইফা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন নিরাপত্তার জন্য হাতে সূতা বেঁধেছে তখন তিনি তা ছিড়ে ফেললেন এবং আল্লাহর এই বাণী পড়লেন:
وَ مَا يُـؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَ هُمْ مُشْرِكُوْنَ
“অনেক মানুষ আল্লাহর উপর ঈমান রাখলেও কিন্তু তারা মুশরিক ” (সূরা ইউসুফ ১০৬)
ইবনে আবি হাতেম থেকে বর্ণিত । হুযাইফা (রাঃ) ঐ ব্যক্তিকে ধমক দিয়ে বললেন,
لو مت وهو عليك ما صليت عليك
“তুমি যদি এর উপর মৃত্যু বরণ কর তা হলে আমি তোমার জানাযার নামায পড়ব না। ”